সিলেট শিশু একাডেমীতে ৩২ বছর ধরে বারান্দায় ক্লাস সিলেট প্রতিনিধি |

নিজস্ব ভবন নেই শিশু একাডেমী সিলেট জেলা কার্যালয়ের। তাই ৩২ বছর ধরে ভাড়া করা স্থানেই চলছে এর কার্যক্রম। আর ভাড়া করা ওই স্থানের বারান্দার মেঝেতে ক্লাস করছে শিশুরা।
শিশু একাডেমীর প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার পরই সিলেটে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮২ সাল থেকে নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের দোতলা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সিলেট জেলা কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দোতলার ভাড়া নেওয়া চারটি কক্ষের দুটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও অপর দুটি কক্ষে পাঠাগার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে। আর জায়গার অভাবে শুরু থেকেই বারান্দার মেঝেতে শিশুদের ক্লাস চলছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রায় এক হাজার শিশু বর্তমানে সংগীত, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, তবলা ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। চলতি মাসের শেষ থেকে গিটার প্রশিক্ষণ চালু করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫টি স্থানে শিশু একাডেমীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই সিলেটের অবস্থান।
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক তরুণ কান্তি দাস জানান, তাঁর এক ছেলে চিত্রাঙ্কন ও মেয়ে নৃত্যের ক্লাস করছে। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই অন্যদের সঙ্গে তাঁর সন্তানদের বারান্দার মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে।
নগরের রিকাবীবাজার এলাকার গৃহিণী চাঁদনী রানী সিনহা নামের আরেক অভিভাবক বলেন, শিশুরাই আগামী দিনে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঝেতে বসে চিত্রাঙ্কন বিভাগের ৩০ জন শিশু ক্লাস করছে। দীর্ঘক্ষণ নিচু হয়ে বসে থেকে পিঠে ব্যথা অনুভব করায় কয়েকজন শিশু বারবার দাঁড়িয়ে নিজেদের সামলে নিচ্ছিল।
স্কলার্সহোম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. আদনান সামী বলে, ‘বাসায় চেয়ারে বসে ছবি আঁকি। এখানে মাটিতে বসে আঁকতে গেলে পিঠে ব্যথা ধরে যায়। ভালো করে ছবি আঁকতে পারি না।’
সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পিনাক দ্যুতি সিনহা বলে, ‘বেশির ভাগ সময়ই বারান্দায় একই সঙ্গে গান, আবৃত্তি, নৃত্যের ক্লাস হয়। এ কারণে আমরা ভালোভাবে শিক্ষকের কথা শুনতে পাই না।’
কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিশু একাডেমীতে মাত্র একটি শৌচাগার রয়েছে। এ কারণে অভিভাবক ও শিশুদের সমস্যায় পড়তে হয়। এদিকে একটি কক্ষে পাঠাগার থাকায় অনেক বই গুদামে রাখা হয়েছে। এতে অনেক শিশু ভালো বই পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশু একাডেমীর চারুকলা বিভাগের প্রশিক্ষক এনামুল হক জানান, একাডেমীতে ২০ জন প্রশিক্ষক শিশুদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাঁদের বসার সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। সম্প্রতি অভিভাবকদের জন্য বসার জন্য কিছু চেয়ারের ব্যবস্থা করা হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়।
শিশু একাডেমীর জেলা সংগঠকের দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল নগরের পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকায় শিশু একাডেমী জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ৫০ শতক জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। এরপর সেখানে একটি অত্যাধুনিক একাডেমী ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আরও ১২টি জেলার সঙ্গে সিলেটে শিশু একাডেমীর ভবন নির্মাণের বিষয়ে একটি যৌথ প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সিলেট জেলা শিশু একাডেমীর সংগঠক সাইদুর রহমান ভূইঞা বলেন, স্থানাভাবে অফিস, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, পাঠাগার পরিচালনাসহ সার্বিক কার্যক্রমেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা: বিশেষ প্রস্তুতি ৫০ ইংরেজি ২য় পত্র

Auto Distance

Great Quran